আওয়ামী লীগ আজ টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার পরিচালনার দুই বছর পূর্ণ করছে। এই সময়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলা করে জীবন-জীবিকার গতি সচল রাখাই ছিল সরকারের বড় সাফল্য। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাফল্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ, পাশাপাশি উন্নয়ন-সমৃদ্ধির ধারাও এগিয়েছে সমান গতিতে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এরপর বিএনপিসহ কয়েকটি দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় আওয়ামী লীগ ও জোট। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে ভূমিধস জয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।
বিশ্নেষকরা বলছেন, এক যুগ আগে দেশের জনগণ স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার প্রতিদান দিয়েছেন। সুবিশাল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই তার প্রমাণ। শেখ হাসিনার সরকার ধারাবাহিকভাবে গত ১২ বছরে এই উন্নয়ন ও অগ্রগতির সব সূচকেই যুগান্তকারী মাইলফলক স্পর্শ করেছে। ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় সত্যিকার অর্থেই উন্নয়নের এক ‘রোল মডেল’। অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশকে ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে অগ্রগতির অভূতপূর্ব স্মারক বহন করছে। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও বিশ্বের বুকে আজ বিশেষভাবে অনুকরণীয় রাষ্ট্রের মর্যাদা পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের মার্চে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর প্রায় ১০ মাসে চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কারণেই অর্থনীতির পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকার গতি থেমে থাকেনি, বরং অনেকটাই সচল ছিল। করোনার মধ্যেও এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে কেবল একজন প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের কারণেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে, করোনাকালে বিদায়ী অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) মতে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে। চীন, ভারত ও মালদ্বীপের পর সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে সরকারি হিসাবে মাথাপিছু গড় আয় প্রায় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার এবং রেমিট্যান্স আয়ে রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। করোনার বছরেও বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সরকারি হিসাবে দারিদ্র্যের হার নেমেছে ২০ ভাগে। যদিও বেসরকারি হিসাবে করনোকালে দারিদ্র্যের হার কিছুটা বেড়েছে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার ক্ষমতায় আসার সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ।
রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল জয় পাওয়ার পর গত দুই বছরে বর্তমান সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের পথে মনোযোগ দিয়ে সাফল্য পেয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অব্যাহত রাখা ছিল সরকারের আরেকটি বড় সাফল্য। মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ও শুদ্ধি অভিযানের মধ্য দিয়ে সরকার চেষ্টা করেছে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে। পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে সরকার ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ পালনের সঙ্গে চলতি বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
গত ১০ ডিসেম্বর দৃশ্যমান হয়েছে ছয় হাজার ১৫০ মিটারের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। চলতি বছরের শেষ নাগাদ অথবা আগামী বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু চালু করার আশা করছেন সংশ্নিষ্টরা। সব ষড়যন্ত্র আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতুর বাস্তব রূপ দেওয়া সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সব মহলে।
সরকারের অগ্রাধিকারের মেগা প্রকল্প বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রাজধানীতে প্রায় ২০ কিলোমিটারের মেট্রোরেল এবং কর্ণফুলী টানেলের কাজও করোনা-দুর্যোগের মধ্যে গতি পেয়েছে। এই তিনটি মেগা প্রকল্প আগামী বছরেই শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতার গত দুই বছরসহ এক যুগে উল্লেখ করার মতো আরও অনেক সাফল্য রয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, পায়রা বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ এবং মহাসড়কগুলোকে চার লেনে উন্নীতকরণসহ মেগা প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। দুই ডজনের বেশি হাইটেক পার্ক এবং আইটি ভিলেজ নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ রয়েছে। এ পর্যন্ত ৯৯ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও আশ্রয়হীনদের ঘর করে দেওয়া এবং একটি বাড়ি একটি একটি খামার প্রকল্পসহ অন্য উদ্যোগগুলোও সাফল্যের সঙ্গে এগিয়েছে। সাক্ষরতার হার ৭৩ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply