1. zunaid365@gmail.com : Natore Times :
সংবাদ শিরোনাম :
সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে তারেক রহমানকে দেশে আনতে হবে: দুলু সিংড়ায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৃক্ষ রোপন ও বিতরন তরুণদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে বিদেশী বন্ধুদের সহযোগিতা চান ড. ইউনূস জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে আরো সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছেন: হোয়াইট হাউস ‘দেশে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা হলেই আমার সন্তানের আত্মদান সার্থক হবে’- শহিদ মানিকের বাবা লা লিগা: দারুণভাবে ফিরে এসেও মাদ্রিদের সাথে পেরে উঠেনি আলাভেস দশ বছরের জয়খরা কাটিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন বাংলাদেশের ফের নিষ্ক্রিয় জিমেইল অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাড়ছে সেশনজটের শঙ্কা শত শত অবৈধ ব্লাড ব্যাংকে চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্ত বিক্রি

বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি পাল্টে যাওয়ার সময়

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২১

গত এক যুগে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি পাল্টে গেছে। স্বল্প আয়ের দেশ নয় আর ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্ত পূরণ হয়েছে এই সময়ে।

মাথাপিছু আয়সহ নানা বিষয়ে শর্ত পূরণের পর ২০১৮ সালের ২২ মার্চ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীলে উত্তরণের প্রাথমিক এই যোগ্যতা অর্জন করে। সেটি বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন হয় বাংলাদেশে।

আগামী ১৮ থেকে ২২ মার্চ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক সম্মেলন থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ বা ছাড়পত্র দেয়া হবে। যার ভিত্তিতে আগামী ২০২৪ সালে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

এর আগে মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে স্বল্প আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশের স্বীকৃতি দেয়। এর ঠিক তিন বছর পর জাতিসংঘ কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রাথমিক স্বীকৃতি বিশ্বের সাম্প্রতিক উন্নয়ন ইতিহাসে এক অনন্য নজির।

জাতিসংঘের এ স্বীকৃতির মধ্যদিয়ে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ আরেকবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ দীর্ঘ ৪৩ বছর এলডিসির শিকলে আটকে ছিল।

সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের এক যুগের উন্নয়ন ধারাবাহিকতার কারণেই দেশ আজ এলডিসির বৃত্ত থেকে উন্নয়নশীলের সোপানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। যার মধ্যদিয়ে ‘বাংলা হবে তলাবিহীন ঝুড়ি’- এক সময়ের মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের দম্ভোক্তিপূর্ণ মন্তব্য ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো দেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি-এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে (ডেভেলপিং কান্ট্রি-ডিসি) পরিণত হতে তিনটি সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড সূচকের অন্তত দুটিতে নির্ধারিত মান অর্জন করতে হয়। এর জন্য সব দেশকেই উত্তরণের একটি নির্ধারিত সময় দেয়া হয়। শর্ত পূরণে বাংলাদেশের সময়সীমা ছিল ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত।

হাতিরঝিল
হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি প্রতীক।
তবে এই নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালেই সবকটি শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের চূড়ান্ত উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত উন্নয়নশীল দেশের ইতিহাসে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যারা সব সূচকেই সক্ষমতা নিয়ে এই মাইলফলক ছুঁয়েছে। তাই খোদ জাতিসংঘই বাংলাদেশকে আগামী দিনের উন্নয়নে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে দেখছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতার কারণেই এই দুর্লভ অর্জন সম্ভব হয়েছে -বলে মনে করছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তা, রাজনীতিক ও অর্থনীতিবিদরা।

তারা দাবি করেছেন, দীর্ঘ এক যুগ ধরে একটি গণতান্ত্রিক ও উন্নয়নমুখী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকার সুফল পাচ্ছে দেশ। তবে দেশে সাফল্যের ঝুলিতে স্বাধীনতা পরবর্তী যত অর্জন রয়েছে, স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীলে উত্তরণের ঘটনা তার সব মর্যাদা ও মাহাত্ম্য আত্মতৃপ্তিকে ছাড়িয়ে গেছে। কারণ এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ইতিবাচক দিকগুলো বেরিয়ে আসবে এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।

তবে এই উত্তরণের মূল বার্তা হচ্ছে- ভবিষ্যতে কারও দয়ায় বাংলাদেশকে আর চলতে হবে না। জোট-সংস্থা বা দাতাদের প্রণোদনার ওপরও নির্ভর করা যাবে না। অর্থাৎ চলমান অর্থনৈতিক কাঠামোকে পুঁজি করেই বাংলাদেশকে নিজস্ব সক্ষমতার ওপর ভবিষ্যতের দিকে এগোতে হবে।

এর মানে হচ্ছে- আন্তর্জাতিক বাজার ও দাতা দেশ ও সংস্থা থেকে পাওয়া অনেক সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ হারাবে। তবে কোথায় কোথায় কী ধরনের সুবিধা হারাবে এবং তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে তার সময়াবদ্ধ রূপকল্প তৈরি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা গেলে এই উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য সুখকরই হবে।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি সরকারের আগামীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি গতিশীল করে তুলবে।’

তিনি বলেন, ‘নিম্নমধ্যম আয় ও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের আগে আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলও (এমডিজি) সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি। তবে আমরা উন্নয়নশীল দেশের তকমাও বেশি দিন গায়ে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই না। আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উত্তরণের। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এর বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্ম কৌশল ও পরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে সরকার। এক্ষেত্রে সামনে সম্ভাব্য যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেগুলোও আমরা সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো আশা করছি।’

তবে করোনার কারণে এর ধারাবাহিকতায় কিছুটা ছেদ পড়তেও পারে। তবে কতটা ছেদ পড়েছে তার তথ্য এখনও জানা যায়নি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার নিউজবাংলাকে জানান, ‘করোনার প্রভাব বাংলাদেশে একা নয়, বিশ্বব্যাপী ফেলেছে। তবে তুলনামুলক কম প্রভাবই পড়েছে দেশে। তাই বলে উত্তরণ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই।’

যে সম্ভাবনা

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে (ডিসি) উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকির তুলনায় সম্ভাবনাই বেশি দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মধ্যে রয়েছে চারটি বড় সম্ভাবনা।

১. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিশ্বের যে কোনো দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটায়।

২. উদ্যোক্তার মধ্যে সৃষ্ট মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব। এর ফলে দেশে ছোট-বড় সব উদ্যোক্তার মধ্যে সনাতনী চেতনার পরিবর্তন ঘটবে এবং বিশ্বায়নের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিরাপদ ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। এ মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের প্রভাব মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) গতি সঞ্চার করবে।

৩. বিশ্বায়নের অবাধ প্রতিযোগিতায় উদ্যোক্তাদের টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। এর কারণ উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশের আগে হাতে থাকা নয় বছর সময়ে বাংলাদেশের শিল্পপণ্য উৎপাদনে অনেক বৈচিত্র্য আসবে। বাড়বে কর্মদক্ষতা। প্রসার ঘটবে তথ্যপ্রযুক্তির। সংযোজিত হবে বিশ্বের সব আধুনিক যন্ত্রপাতির।

৪. উল্লিখিত তিন কারণে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট হবে- যা উন্নত দেশের অবকাঠামো তৈরির পথ সুগম করবে।

কোথায় আশঙ্কা

আছে ঝুঁকিও। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রপ্তানি খাতে। যেসব বাজার বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়, উত্তরণের পর তা আর থাকবে না। এতে প্রতি ১০০ টাকায় রপ্তানিতে আগের চেয়ে সাড়ে সাত টাকা বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ এ পরিমাণ আয় কম হবে। ফলে তখন প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, রপ্তানি আয় ৫.৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ফলে প্রতি বছর মোট রপ্তানি আয়ের দেড় বিলিয়ন থেকে ২.২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে হারাতে হবে।

আরেকটি ঝুঁকি হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর স্বল্প সুদ, বিনা সুদের ঋণ ও অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে। এর ফলে বাংলাদেশকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে।

এছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেরই উত্তরণের পর দেখা গেছে, প্রবৃদ্ধিতে পতন ঘটেছে। বৈদেশিক সাহায্য ও রেমিট্যান্সের পতন ঘটে। এর ফলে তাদের যে আর্থিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে তার ওপর একটা নতুন চাপ সৃষ্টি হয়।

আছে সুযোগ নেয়ার উপায়ও

বাংলাদেশ চলতি বছর উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ছাড়পত্র পেলে বিধান অনুযায়ী, পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল পর্যন্ত গ্রেস পিরিয়ড সুবিধা নিতে পারবে বাংলাদেশ। ওই সময় উত্তরণ প্রক্রিয়ার চূড়ান্ত সমাপ্তি হয়ে যাবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধাসহ অন্যান্য বিশেষ সুবিধা ছাড়ের প্রক্রিয়া কঠোর হতে শুরু করবে।

এর পরেও পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ক্রমহ্রাসমান হারে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশের পরও বাংলাদেশের হাতে থাকছে প্রায় সাতটি বছর।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরীর আরো সংবাদ

© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।

Site Customized By NewsTech.Com