এফএনএস
দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রশাসনিক সঙ্কটে সেশনজট বাড়ার শঙ্কা বাড়ছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিগত সরকারের আমলের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদত্যাগ না করলেও প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিরা কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বর্তমানে প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু এখনো অন্তত ১৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে একধরনের প্রশাসনিক সংকটের মুখে পড়েছে ওসব বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও সংশ্লিষ্ট ক্যাম্পাসগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অবিলম্বে উপাচার্য ও শীর্ষস্থানীয় প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ গত ৮ আগস্ট শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ফলে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো ফাঁকা থাকায় নিয়মিত হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা ও একাডেমিক কাউন্সিল। তাতে প্রশাসনিক জটিলতা বেড়েছে। অনলাইনে ক্লাস চললেও এক মাসের বেশি সময় ধরে পরীক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। অধিকাংশ আবাসিক হলগুলোতে নানা সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ হল দেখভালের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগের দাবি উঠেছে। তাছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও (ববি) স্থবিরতা বিরাজ করছে। গত ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন উপাচার্যসহ প্রশাসনিক পদের ১৯ জন। এখন ওসব গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় শিক্ষার্থীরা নানা সমস্যায় পড়েছেন। পরীক্ষা-ক্লাস পিছিয়ে যাওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ উপাচার্য না থাকায় পরীক্ষক নিযুক্ত করা যাচ্ছে না। এমনকি উপাচার্য ছাড়া অনেক ধরনের আর্থিক লেনদেনও করা যাচ্ছে না। একইভাবে তোপের মুখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করেন। কিন্তু এখনো নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাছাড়া উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়। দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য না থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেশন জটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক অন্যান্য শীর্ষ কর্তারা পদত্যাগ করেছেন, সেখানে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে দিয়ে সাময়িকভাবে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব চালিয়ে নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৯ আগস্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ফলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বর্তমানে ওই নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত হচ্ছে। তবে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ পরামর্শ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরকৃবি) উপাচার্য পদ থেকে সরে দাঁড়ান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার সাময়িক দায়িত্ব পেয়েছেন মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, আর্থিক ও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সূত্র আরো জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে পদত্যাগ করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যানিমেল ও বায়োমেডিকেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। একইভাবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) উপাচার্য পদত্যাগ করেন। বর্তমানে জ্যেষ্ঠ ডিন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনিক প্রধানরা একযোগে পদত্যাগ করলে প্রশাসনিক সংকট দেখা দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও ডিসিপ্লিন প্রধানদের সভায় এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পান কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য পদে বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদত্যাগ করার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়। তাছাড়া গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। ওসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গতিশীলতার স্বার্থে অবিলম্বে উপাচার্যসহ প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সিনিয়র শিক্ষকদের অভিমত, উপাচার্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তি। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সিদ্ধান্তগুলো উপাচার্যের নির্দেশে হয়। ফলে দু-এক সপ্তাহের জন্য কেউ রুটিন দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু দেড় মাস বা আরো দীর্ঘ সময় উপাচার্য ছাড়া চলে না। তাই যতো দ্রুত সম্ভব উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সচল করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। কারণ উপাচার্য নিয়োগ দিতে যতো দেরি হবে, ক্যাম্পাসগুলোয় স্থিতিশীলতা ফিরতে ততো দেরি হবে। শিক্ষাও পিছিয়ে পড়বে।
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply