বেসরকারি চাকরিজীবী সাদাত হোসেনের ল্যাপটপের পর্দা গত শুক্রবার হঠাৎ নষ্ট হয়ে যায় । এদিকে সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। হোম অফিসে যেতে হবে আবার। অন্যদিকে শিশুসন্তানের অনলাইন ক্লাস শুরু হবে ১২ জুলাই। এ অবস্থায় ল্যাপটপ ছাড়া চলার উপায় নেই। সে জন্য একরকম বাধ্য হয়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে ল্যাপটপের ডিসপ্লে বদল করালেন তিনি। লকডাউন না হলে মাসের শেষে এত টাকা খরচ করতেন না বলেই জানালেন সাদাত হোসেন।
লকডাউনে হোম অফিস করতে হবে এবং বেশ কিছুদিন মার্কেট বন্ধও থাকতে পারে, এই বাস্তবতায় গত বছরের মতো এবারও প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে গেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে তাই ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতাদেরও রমরমা।
কেউ এসেছেন ল্যাপটপ মেরামত করাতে, কেউ এসেছেন নতুন পিসি কিনতে, কেউ কিনছেন প্রিন্টার-স্ক্যানার। ব্যক্তিগত কেনাকাটার পাশাপাশি করপোরেট কেনাকাটাও চলছে। প্রায় প্রতিটি দোকানের সামনে জটলা লেগে আছে। ফলে বিক্রেতাদের দম ফেলার ফুরসত নেই।
তবে বেশির ভাগ মানুষই এসেছেন ল্যাপটপ মেরামত করাতে। লকডাউনের মধ্যে যাঁদের হোম অফিস করতে হবে, তাঁদের এই যন্ত্রের বিকল্প নেই। যাঁরা হোম অফিস করবেন না, তাঁরাও অনেকে এ সময়টা সিনেমা দেখে কাজে লাগাতে চান। সে জন্য নষ্ট ল্যাপটপ মেরামত করাতে এসেছেন তাঁরা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আমির খসরু অবশ্য নতুন ব্র্যান্ড পিসি কিনলেন। পেশায় ব্যবসায়ী তিনি, লকডাউনের মধ্যে ব্যবসা সামলাতে হবে। তবে এ সময় নতুন ব্র্যান্ডের পিসি কেনার কারণ সম্পর্কে বলেন, আগের পিসিটি পুরোনো হয়ে গেছে। অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা ছিল নতুন পিসি নেওয়ার। লকডাউনের পর দাম আবার বেড়ে যায় কি না, সেই শঙ্কায় আগেই কিনে ফেললেন তিনি। লকডাউন না হলে এখনই নতুন পিসি কিনতেন না।
মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের অরেঞ্জ কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘সকাল থেকেই ক্রেতাদের ফোন ধরতে ধরতে ক্লান্ত। সবারই এক কথা, আবার লকডাউন হবে, ল্যাপটপটা সারিয়ে দিন।’ কিন্তু সবাইকে এ সেবা দিতে পারছেন না তিনি। অনেক গ্রাহককেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। বলেন, ‘হঠাৎ এত চাপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’ এ ছাড়া অনেকে আবার লকডাউনের পর দাম বেড়ে যাওয়ার ভয়ে আগেভাগেই পিসি কিনছেন, যাঁরা হয়তো আরও পরে কিনতেন।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে হোম অফিস ও অনলাইন ক্লাসের চল শুরু হওয়ায় ল্যাপটপসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। এতে গত ১৪ মাসে কম্পিউটার ও আইটি অ্যাকসেসরিজের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি অনেক ছোট-বড় কারখানা আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যন্ত্রাংশ আমদানি কমেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে ব্র্যান্ডের পিসি খুঁজতে আসা দু-একজন বলেন, চাহিদামতো অনেক পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া জোগান কমে যাওয়ার কারণে বাজারে নকল পণ্যের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করেন।
(prothomalo)
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply