দেশজুড়ে চাহিদা বেড়েছে রসালো ফল তরমুজের। এ বছর পবিত্র রমজান ও গ্রীষ্মকালের দাবদাহ একসঙ্গে শুরু হওয়ায় তরমুজের চাহিদাও বেশ। করোনাকালীন ঠান্ডা পানীয় থেকে দূরে থাকায় তরমুজের ওপর চাপ বেড়েছে প্রচণ্ড। আর সেই চাহিদাকে পুঁজি করে তরমুজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়ে দিয়েছেন তরমুজের দাম। এতে কেনা দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মুনাফা করছেন তারা।
নাটোরেও কয়েক দিন ধরে প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে নাটোর জেলা প্রশাসনের এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সেই তরমুজের প্রতি কেজিতে দাম কমেছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট ভেঙে সরাসরি কৃষকদের মাধ্যমে তরমুজ বিক্রি করে ও ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে নাটোরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে।
রোববার (২ মে) সকালে নাটোর শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে তরমুজ বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সুব্রত কুমার সরকার, পৌর মেয়র উমা চৌধুরী জলিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, সেখানে আকারভেদে সর্বনিম্ন ২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা কেজি দরে কৃষকেরা সরাসরি তরমুজ বিক্রি করেন।
অন্যদিকে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় চলতি বছরে ৮৬৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে, যা থেকে প্রায় ৩৬ হাজার ৪৫৬ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছে তারা।
তরমুজ কিনতে আসা তমাল হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ নেওয়াকে আমি সাধুবাদ জানাই। তার কারণে আজ আমি একটি তরমুজ কিনতে পারলাম, কেজিতে ২৫ টাকা করে কম পেলাম, সব পণ্যের ক্ষেত্রেই এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
অটোরিকশাচালক রমজান আলী বলেন, লকডাউনের কারণে ঠিকমতো গাড়ি চালাতেই পারি না। রাস্তাঘাটে যাত্রীরও অভাব। দিন শেষে যা আয় হয়, তাতে কোনোরকমে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেঁচে আছি। ছেলেমেয়েরা তরমুজ খেতে চাইলেও সম্ভব হয়নি। কিন্তু জেলা প্রশাসন ন্যায্য মূল্যে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছে দেখে একটি তরমুজ কিনেছি। জেলা প্রশাসনের কারণে পরিবার নিয়ে আজ এ বছরের প্রথম তরমুজ খাব।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর জুয়েল আহমেদ বলেন, উদ্বোধনী দিনে মোট চার টন ওজনের ৮০০ পিস তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। পাঁচ কেজির একটি তরমুজ ৩৫ টাকা কেজি দরে এবং এর বেশি ওজনের তরমুজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাচাহিদা বিবেচনায় প্রতিদিনের তরমুজ বিক্রি বাড়বে।
জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বলেন, একে তো রমজান মাস, তার ওপর আবার প্রচণ্ড গরম পড়েছে। ফলে মানুষের পছন্দের ফল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে তরমুজ। কিন্তু তরমুজ ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে ছিল সাধারণ ক্রেতারা। অনেকে বাধ্য হয়ে কিনেছেন তরমুজ। অনেকে দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারেননি। তাই আমরা এমন উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, ক্রেতারা প্রতি কেজি তরমুজে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমে কিনতে পেরে খুব খুশি হয়েছেন। আমাদের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply