এক সময়ের বিএনপির দুর্গ হিসেবে বিদিত নাটোরের সিংড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মতানৈক্যে বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তিন বছরের জন্য গঠিত হওয়া ১২টি ইউনিয়ন কমিটি ১০ বছর শেষে বিলুপ্তি করা হয়েছে। সম্প্রতি নতুন কমিটি ঘোষণা হলেও আপত্তি জানিয়েছে দলের যুগ্ম আহ্বায়করা। তারা ঘোষণা করেছেন পাল্টা কমিটি। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে বিএনপির দুই পক্ষের নেতাদের অনুসারীদের মধ্যেও।

একই দিনে নিজেদের অনুসারীদের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব করে সিংড়ার ১২টি ইউনিয়ন বিএনপির পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করেছেন আহ্বায়ক কমিটির ছয় নেতা। তারা হলেন- একাংশে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এড. মজিবর রহমান মন্টু ও সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদ এবং অপরাংশে চার যগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন, এড. ইউসুফ আলী, শারফুল ইসলাম ও শাহাদৎ হোসেন। আহ্বায়ক-সদস্যসচিব ও যুগ্ম আহ্বায়কদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বের প্রভাব পড়েছে ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির ঘোষিত দুই পক্ষের নেতাদের মধ্যে। তারাও নিজ অনুসারীদের নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন।

গত ১৭ই মার্চ বুধবার দুপুরে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এড. মজিবর রহমান মন্টু ও সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদের স্বাক্ষরে বিএনপির ১২টি ইউনিয়ন কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাতেই চারজন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম, এড. ইউসুফ আলী, শারফুল ইসলাম ও শাহাদৎ হোসেনের স্বাক্ষরে পাল্টা কমিটির ঘোষণা করেন। জেলা বিএনপির নির্দেশক্রমে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিবাদমান দুই পক্ষের নেতারা।

এদিকে, পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠনের পরও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া বা সিদ্ধান্ত জানায়নি জেলা বিএনপি। জেলার নেতাদের ‘রহস্যজনক’ কালক্ষেপণ ক্ষোভ বাড়চ্ছে তৃণমূলের কর্মীদের। অস্বস্তিতে পড়েছে অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারাও বিবাদমান নেতাদের মতানৈক্যে বিভক্ত হবার শঙ্কায় রয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম ও এড. ইউসুফ হোসেন জানান, ২০১৯ সালের ২৪শে নভেম্বর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অনুমোদন পত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, আহবায়ক, সদস্য সচিব ও যুগ্ম আহবায়কদের স্বাক্ষরে ইউনিয়ন কমিটি ঘোষিত ও অনুমোদিত হবে। কিন্তু যুগ্ম আহবায়কদের না জানিয়ে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নিজেদের অনুসারী ও বিতর্কিতদের দ্বারা গঠিত কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা এই সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করে যোগ্যদের দ্বারা গঠিত কমিটির অনুমোদন দিয়েছি।

সিংড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. মজিবর রহমান বলেন, ‘এই মুহূর্তে কার্যকরী কমিটি না থাকায় দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটির অনুমোদন দেয়ার এখতিয়ার শুধু কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের। আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শক্রমে ইউনিয়ন কমিটিগুলো অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কমিটিতে ত্যাগী ও নির্যাতিতদের কর্মীদেরকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কে, কার অনুসারী-তা বিবেচনা করা হয়নি। এই কমিটি আগামীতে দলীয় সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচী বাস্তবায়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।’

জেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আহ্বায়ক-সদস্য সচিবের স্বাক্ষর ছাড়া কমিটি ঘোষিত ও অনুমোদিত হওয়ার নিয়ম নেই। যুগ্ম আহবায়করা কমিটি দিতে পারেন না। তাদের কমিটি গ্রহণযোগ্য হবে না। কেন একই ইউনিটে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা করা হলো তা খতিয়ে দেখা হবে।’