দেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে—বিডিএস) জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে। কারণ, এর মাধ্যমে দেশের নাগরিকদের ভূমি সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদি হয়রানি ও বিপুল অর্থ ব্যয় বন্ধ করা সম্ভব হবে। ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেলো এসব তথ্য।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারা দেশে ডিজিটাল জরিপের সক্ষমতা অর্জনে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২১২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিজিটাল সার্ভের উদ্যোগ নেয়।
‘ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের ডিজিটাল জরিপ পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প’ নামে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্পের মাধ্যমে এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
স্বল্প সময়ে, নির্ভুলভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ করতে বাংলাদেশ ভূমি জরিপ তথা বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভেতে স্যাটেলাইট, ড্রোন এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের সমন্বয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।
তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া দেশের ৪৭০টি উপজেলার মৌজা পর্যায়ে জিওডেটিক সার্ভের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার ৩১০টি জিও-রেফারেন্সিং পয়েন্ট নির্ধারণ করা হবে ও ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৮৮টি মৌজা ম্যাপের ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হবে।
ভূমিতে আগে জরিপ করা থাকলে ওই জরিপের ডিজিটাইজড ম্যাপের সঙ্গে নতুন ম্যাপ সুপার-ইম্পোজ করেই বানানো হবে জিও রেফারেন্স মৌজা ম্যাপ।
এছাড়া পরে ‘মৌজা ও প্লটভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’ থেকে সংগ্রহ করা স্যাটেলাইট ইমেজের সঙ্গেও সমন্বয় করা হবে এই মৌজা ম্যাপ।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমি জরিপ (ভূ-সম্পদ জরিপ/ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ঠিকভাবে না হলে তা ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে দীর্ঘমেয়াদি সংকট ডেকে আনে।
ভূমি জরিপের সময় মাঠ পর্যায়ের অসৎ কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যক্তি, দালাল কিংবা ভূমিদস্যুর যোগসাজশে ইচ্ছাকৃত অসঠিক জরিপ কিংবা নিছক অসাবধানতাজনিত ত্রুটিপূর্ণ জরিপের কারণে, প্রকৃত মালিক ব্যতীত জমি অন্য ব্যক্তির নামে কিংবা সরকারের নামে চলে গেলে তার নিষ্পত্তিতে মামলা-মোকদ্দমা চলতেই থাকে।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমি সংক্রান্ত মামলা ৫০-৬০ বছরেও নিষ্পত্তি হয় না। মামলা চালাতে গিয়ে অনেক পরিবার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব মামলার সূত্রপাতের অন্যতম কারণ ভূমি জরিপের ত্রুটি।
এছাড়া, প্রচলিত জরিপের আরেকটি সমস্যা দীর্ঘসূত্রতা। নানা কারণে একেকটি জরিপ শেষ হতে ২০-২৫ বছরও লেগে যায়।
আবার, ভূমির মালিকানা ও অধিগমনের ক্ষেত্রে দরিদ্র, ভূমিহীন, প্রান্তিক, নারী ও ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য কৃষিভূমি ও জলার রক্ষা ও সংস্কার প্রয়োজন। গরিব ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে খাস জমি এবং চরের জমি বিতরণ; শত্রু এবং অর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়া, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীদের ন্যায্য স্বার্থ নিশ্চিত করা, নারীদের জমির মালিকানা নিশ্চিত করা, বঞ্চিত জনগণের সেবা প্রদানের জন্য ভূমি আইনের ফাঁকফোকর বন্ধ করতেও নির্ভুল জরিপ প্রয়োজন।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জরিপের দীর্ঘসূত্রতা ও হয়রানি কমাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমি মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ডিজিটাল জরিপের নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় বিডিএস নামের ক্যাডাস্ট্রাল জরিপের উদ্যোগ নেয়।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী গত বুধবার (৩ আগস্ট) পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সংলগ্ন মাঠে বিডিএস-এর পাইলটিং উদ্বোধন করেন।
এ সার্ভের মূল উদ্দেশ্য অল্প সময়ে সমগ্র বাংলাদেশে ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে তথা ভূ-সম্পদ জরিপ শেষ করা এবং পরে মাঠে গিয়ে সার্ভের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে আনা।
এছাড়া কোনও এলাকায় প্রাকৃতিক কারণে বড় ধরনের ভূমির বিচ্যুতি না ঘটলে রিভিশন্যাল সার্ভের প্রয়োজনীয়তাও থাকবে না ডিজিটাল ম্যাপ পার্টিশনের সুবিধার জন্য।
এ প্রকল্পের আওতায় নির্ধারিত জিও-রেফারেন্সকৃত মৌজা ম্যাপ ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন’ প্রকল্পে সরবরাহ করা হবে। জমি বিক্রির পর নামজারি খতিয়ান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ম্যাপের সীমানাও বদলে যাবে।
বিডিএস ম্যাপে জমির পরিমাণ, আইলের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, আকার সম্পর্কেও জানা যাবে। এই জরিপে তৈরি ম্যাপটিতে সেন্টিমিটার পর্যায়ে ভূমি পরিমাপের নির্ভুলতা থাকবে। পরিমাপের ক্ষেত্রে ইমেজ থেকে সুবিধামতো রেফারেন্স-এর কো-অর্ডিনেটের মান ও মৌজা ম্যাপের যেকোনও প্লটের দূরত্বের মাপ ও প্লটের খতিয়ান নির্ধারিত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপ ও চার কোনার চারটি কো-অর্ডিনেট মান নিয়ে কনভেনশনাল ও আধুনিক ডিজিটাল পদ্ধতিতে যেকোনও প্লটের পরিমাপ, ল্যান্ড ডিমার্কেশন, ল্যান্ড ডিভাইডেড করা সম্ভব হবে।
এতে বাড়তি করে দরকার হবে না আলাদাভাবে স্থাপিত কোনও রেফারেন্স জিওডেটিক পিলার তথা জরিপের জন্য পিলার স্থাপনের।
প্রচলিত ভূমি জরিপে যেখানে ২০-২৫ বছর লাগে, সেখানে খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ করা সম্ভব হবে।
এই জরিপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে খসড়া ম্যাপ তৈরি করে ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে। যাতে জমির মালিক বিশ্বের যেকোনও স্থান থেকে তার জমির ম্যাপ দেখে জমির পরিমাণ কমবেশি হলে তাৎক্ষণিক আপত্তি দাখিল করতে পারেন।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, প্রচলিত ভূমি জরিপে যেখানে ২০-২৫ বছর লাগে, সেখানে খুব কম সময়ে বাংলাদেশ ডিজিটাল জরিপ করা সম্ভব।
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply