নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর পশ্চিমপাড়া গ্রামে আমির আলী(৭০) ও আলেকা বেগম (৬৫) নামের এক বৃদ্ধ দম্পতির রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। হত্যাকারী দুজনেরই মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। উভয়ের মাথা ও গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। ভোঁতা ও শক্ত অস্ত্রের আঘাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার(৮ মে) সকাল ৭টায় নিজ বাড়ির বারান্দা থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়না তদন্তের জন্য বর্তমানে তাদের মরদেহ নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক বা জিজ্ঞাসাবাদ করেনি পুলিশ। তবে পুলিশের একাধিক সূত্র ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডের মোটিভ উম্মোচনে কাজ শুরু করেছে। হত্যাকান্ডটি নিয়ে বেশ ধুুু্ম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, এই হত্যাকান্ড সংঘটনের সময় নিয়ে বৃদ্ধ দম্পতির পরিবার ও পুলিশ ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। বৃদ্ধ আমির আলী নাতি শিমুল সকালে হত্যাকান্ডের বিষয়টি টের পায় বলে পুলিশকে জানিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, এই হত্যাকান্ড বৃহষ্পতিবার(৬ই মে) রাতে সংঘটিত।
শনিবার(৮ মে) দুপুরে নিজ কার্যালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, মরদেহ দেখে মনে হয়েছে গত রাতে এ হত্যাকান্ড ঘটেনি। এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বৃহষ্পতিবার রাতে। কেননা সর্বশেষ বৃহষ্পতিবার রাতে বৃদ্ধ আমির আলী পাশ্ববর্তী একটি বাড়িতে রাতের খাবার খান। ওই রাতের পর থেকে তাকে আর বের হতে দেখা যায়নি। এতে করে আমরা ধারণা করছি, বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাতেই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
শনিবার দুপুরে জামনগর পশ্চিমপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, একটি টিনশেড পাকা বাড়িতে নির্ভৃতে বসবাস করতেন আমির-আলেকা দম্পতি। তাদের এক ছেলে আলতাব হোসেন গাজীপুরে একটি একটি গার্মেন্টেস প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। অপর দুই মেয়ের একজন স্বপ্না জামনগর ও সখিনা রাজশাহীর বানেশ্বর এলাকায় থাকেন। আমির-আলেকা দম্পতি কায়িক নিজেদের মাঠে ফসলের আবাদ করতেন। ঘরের ফসল ও ছেলের পাঠানো টাকায় ভালোভাবেই তাদের দিন চলছিলো।
নিহত দম্পতির প্রতিবেশিরা জানান, আমির-আলেকা একেবারেই শান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিলেন। তাদের বাড়ির আশেপাশে অন্তত একশো হাত দূরে কোনো বাড়ি ছিলো না। তারা বাড়িতে গরু পালন করতেন। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে খুব একটা বের হতেন না। তাছাড়া একটু দূরে অবস্থান করায় তাদের সাথেও প্রতিবেশিদের খু্ব একটা যোগাযোগ ছিলো না। রাতে গরুগুলো পাহারা দেয়ার জন্য আমির-আলেকা দম্পতি ঘরের বাইরে বারান্দায় চৌকি পেতে শুয়ে থাকতেন।
নিহত দম্পতির ছেলে আলতাব হোসেন জানান, তিনি মাঝে মাঝে মা-বাবার খোঁজ নিতেন ফোনে। সবশেষ গত শুক্রবার সেহেরির সময় তিনি বাবার ফোনে একাধিকবার ফোন করেন। কিন্ত সাড়া না পেয়ে ওইদিন দুপুরে স্থানীয় আত্নীয়দের ফোন করে বাবা মার খোঁজ জানতে চান। কিন্ত তারা সঠিক খবর জানাতে পারেনি।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হোসেন বলেন, শনিবার সকালে নিহত দম্পতির নাতি শিমুল বাড়িতে তাদের খোঁজ নিতে আসেন। নানাকে ডেকে কয়েকবার দরজা ধাক্কা দেন। কিন্ত কোনো সাড়া না পাওয়ায় এক পর্যায়ে দেয়াল টপকে বাড়িতে ঢুকে দেখেন মশারী ছিড়ে আমির-আলেকা দম্পতির মরদেহ কাঁথায় ঢাকা অবস্থায় পড়ে আছে। সে চিৎকারে লোক জড়ো করলে পুলিশ জেনে উপস্থিত হয়। এসময় কিছু সময়ের জন্য শিমুল মূর্ছা যায়। পরে জ্ঞান ফিরে এলে পুলিশ তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যে বা যারা নীরিহ এই দম্পতিকে হত্যা করেছে, তাদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার দাবী করেছেন।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, আমরা এ হত্যাকান্ডকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এটি পারিবারিক হত্যাকান্ড না দুর্বৃত্তদের কাজ, তা দ্রুতই বের করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, নিহত দম্পতির থাকার ঘরসহ আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশী করা হচ্ছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কোনো কিছু চুরি হয়েছে বা খোয়া গেছে কি না, তা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে নাতি শিমুলকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
(নাটোর টাইমস)
© স্বত্ত্বঃ নাটোর টাইমস: ২০১৭-২০২৪ --- “নাটোর টাইমস” এ প্রকাশিত/প্রচারিত যেকোন সংবাদ, আলোকচিত্র, অডিও বা ভিডিওচিত্র বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।
Leave a Reply